Pages

Monday, August 10, 2020

রাশিয়ায় ইসলাম


রাশিয়া 🇷🇺 (রুশ: Россия ), সরকারিভাবে রুশ ফেডারেশন নামে পরিচিত ( রুশ: Российская Федерация রশিস্কায়া ফিদিরাৎসিয়া ) এটি পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত, বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। 


রাশিয়ার বর্তমান মোট জনসংখ্যা সাড়ে চোদ্দ কোটি,যার ভিতর মুসলমান দুই থেকে আড়াই কোটি । বর্তমানে রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ - ১৭ % ইসলাম ধর্মাবলম্বী। রুশ অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের পর ইসলাম ধর্মানুলম্বীরাই রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মানুসারি। ২০১৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের মতে, রাশিয়ার মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ । পিউ রিচার্জের মতে ২০১৭ সালেও মুসলমানদের জনসংখ্যার হার ১০ শতাংশ।

উল্লেখ্য যে, রাশিয়াতে বিশ্বের মোট মুসলিমদের এক শতাংশ বসবাস করে।

রাস এবং এর উত্তরসূরি রাষ্ট্রসমূহ প্রতিবেশী, শাসক বা প্রজা হিসেবে মুসলিমদের সংস্পর্শে এসেছে। মুসলিম ভূমিসমূহ থেকে দূরপাল্লার রৌপ্য বাণিজ্য প্রথম রুশ রাষ্ট্রসমূহ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং খ্রিস্টধর্মের পূর্বে ইসলাম ধর্ম রুশ ভূমিতে পৌঁছায়।

৯৮৮ সালে কিয়েভান রাসের শাসক ভ্লাদিমিরের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের কয়েক দশক আগেই দশম শতাব্দীর মধ্যভাগে ভোলগা বুলগার রাষ্ট্রের শাসকরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

১২৩৬ থেকে ১২৩৭ সালের মধ্যে মোঙ্গলরা ভোলগা বুলগার রাষ্ট্র ধ্বংস করে দেয় এবং এরপর সমগ্র রুশ ভূমিকে পদানত করে। ১৩২৭ সালে গোল্ডেন হোর্ডের শাসক উজবেক খান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এর ফলে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের জন্য রুশ ভূমিসমূহের কর্তৃত্ব মুসলিমদের হাতে ন্যস্ত হয় । এরপর মাস্কোভি ও গোল্ডেন হোর্ডের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকলে মস্কোর রাজপুরুষেরা ক্রমাগত গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সংঘর্ষে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন।

১৩৯২ সালে বর্তমান রাশিয়ার নিঝনি নভগরোদ প্রদেশে বসবাসকারী মিশার তাতাররা মাস্কোভির গ্র্যান্ড ডিউকদের অধীনে চাকুরি গ্রহণ করলে মাস্কোভি প্রথম মুসলিম প্রজা লাভ করে।

১৫৫২ সালে রাশিয়ার জার চতুর্থ আইভানগোল্ডেন হোর্ডের উত্তরসূরি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্র কাজান দখল করেনএবং ভৌগোলিক সম্প্রসারণের এক সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া আরম্ভ করেন।

পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকার যুদ্ধে পরাজিত কাসিমভের খানরা মাস্কোভির আশ্রয় লাভ করেন এবং মস্কোয় বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত অভিজাতে পরিণত হন।

তবে তা সত্ত্বেও রুশদের কাজান বিজয় ছিল একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত, কারণ এর ফলে বিস্তৃত স্তেপভূমিতে রুশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরবর্তী দুই শতাব্দীতে রুশরা বাশকির ওকাজাখ স্তেপের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং এর মধ্য দিয়ে বহুসংখ্যক মুসলিম প্রজা লাভ করে।

১৭৮৩ সালে রুশ সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ক্যাথেরিন গোল্ডেন হোর্ডের সর্বশেষ উত্তরসূরি রাষ্ট্র ক্রিমিয়া দখল করেন এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকেককেশাস পর্যন্ত রুশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হয় ।

বর্তমান আজারবাইজানসহ ট্রান্সককেশীয় রাজ্যসমূহ সহজেই রুশদের পদানত হয়, কিন্তু উত্তর ককেশাস জয় করতে রাশিয়াকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের পুরোটা ব্যয় করতে হয়। ১৮৫৯ সালে ককেশীয় মুসলিমদের সামরিক ও ধর্মীয় নেতা ইমাম শামিলের রুশদের নিকট আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই কেবল রাশিয়ার পক্ষে ককেশাসের জাতিসমূহকে পদানত করা সম্ভব হয়।

১৮৬৪ থেকে ১৮৭৬ সালের মধ্যে রাশিয়া কয়েক দফা সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ার বুখারা,খিভা ও কোকান্দ খানাতগুলোতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কোকান্দ খানাতকে পুরোপুরিভাবে উচ্ছেদ করা হয়, এবং বুখারা ও খিভার বহু অঞ্চলকে রাশিয়ার তুর্কিস্তানপ্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খিভা ও বুখারার অবশিষ্ট অঞ্চল রাশিয়ার আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় । এসব রাজ্যের শাসকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলিতে বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন বজায় থাকলেও রাষ্ট্রদ্বয়ের বৈদেশিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসে।

মধ্য এশিয়া বিজয়ের ফলে রাশিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়, এবং ১৮৯৭ সালের জনশুমারি অনুযায়ী সে সময়ে রাশিয়ায় ১ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি সংখ্যক মুসলিম অধিবাসী ছিল বলে জানা যায়।

১৯৯৭ সালে রুশ সংবিধানে খ্রিস্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবংইহুদিধর্মের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মকেও রাশিয়ার 'সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে'র অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

১৯৯৮ সালে রাশিয়ার তাতারস্তানের কাজানে প্রতিষ্ঠিত রাশিয়ান ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ( Russian Islamic University ) হলো রাশিয়ার প্রথম সরকারী ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ।

এখন রাশিয়ার কয়েকটি প্রদেশে মুসলমানদের হার দেখুন

০১. অ্যাডিজিয়া ( Adygeya ) - ১২.৬০ %

০২. আলতাই প্রজাতন্ত্র ( Altai Republic ) - ৬.২০ %

০৩. আস্ট্রখান ওব্লাস্ট (  Astrakhan Oblast ) - ১৪.৬২ %

০৪. বাশকোর্তোস্টান ( Bashkortostan ) - ৬৮.৬২ %

০৫. চেচনিয়া ( Chechnya ) - ৯৫ %

০৬.  চেলিয়াবিনস্ক ওব্লাস্ট (  Chelyabinsk Oblast ) - ৬.৪৮ %

০৭. ক্রিমিয়া ( Crimea ) - ১৫ %

০৮. দাগেস্তান ( Dagestan ) - ৮২.৬০ %

০৯. ইঙ্গুশেতিয়া ( Ingushetia ) - ৯৬ %

১০. ইহুদি স্বায়ত্তশাসিত ওব্লাস্ট (  Jewish Autonomous Oblast ) - .৮০%

১১. কাবার্ডিনো-বাল্কারিয়ান ( Kabardino-Balkarian ) - ৫৫.৪০ %

১২. কারচে-চের্কেস ( Karachay-Cherkessia ) - ৬৪.০০ %

১৩. খান্তি-মানসী স্বায়ত্তশাসিত ওক্রুগ (  Khanty-Mansi Autonomous Okrug ) - ১০.৮৮ %

১৪. মারি ইল ( Mari E ) - ৬.০০ %

১৫. কুরগান ওব্লাস্ট (  Kurgan Oblast ) - ২.৬২ %

১৬. তাতারস্তান ( Tatarstan ) - ৪৮.৮০ %

১৭. ইয়ামালো-নেনেটস স্বায়ত্তশাসিত ওক্রুগ ( Yamalo-Nenets Autonomous Okrug ) - ১৭.৪০ %

এছাড়াও মস্কোর জনসংখ্যার ৩.৫০ শতাংশ হলো মুসলিম এবং মস্কো হলো ইউরোপের সবচেয়ে বেশি মুসলিম বসবাসকারী শহর।

আমার পেজে একটা লাইক দিয়ে উৎসাহ দিন -
https://www.facebook.com/KHalidOfficialBnEn/
রাশিয়ার মুসলমানরা যথেষ্ট ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করে। ধর্ম পালনে রাশিয়ার মুসলমানরা তেমন বাধার সম্মুখীন হয় না। রাশিয়ার সব দলের নেতারাই মুসলমানদের ভোটে গেমচেঞ্জার মনে করে, তাই তারা সবসময়ই মুসলমানদের নিয়ে সময় মধু বর্ষণ করে।

রাশিয়ার মুসলমানদের ভিতর দশ শতাংশ অর্থাৎ দুই লাখ শিয়া এবং বাকি সবাই সুন্নী। তবে কিছু কাদেয়ানি শয়তানের উৎপাত আছে রাশিয়াতে।

২০০৬ সালে রেকর্ড ১৮,০০০ রাশিয়ান মুসলিম হজযাত্রী সৌদি আরবের মক্কায় হজে অংশ নেন।তখন রাশিয়ার মুসলিম নেতারা সৌদি আরবের বাদশাকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছিলেন যেন সৌদি আরব হজ্জ ভিসার কোটা কমপক্ষে ২৫,০০০-২৮,০০০ করে রাশিয়ার জন‍্য । ফলে ২০১০ সালে ২০,০০০ রাশিয়ান মুসলিম হজযাত্রী হজে অংশ নেন।রাশিয়ার মুসলমানদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা থাকেন, বর্তমানে রাশিয়ার শাইখুল ইসলাম হলেন তালগাত সাফিচ তদজুদ্দিন।


রাশিয়া স্বেচ্ছায় OIC তে যোগ দিতে চেয়েছিলো, তবে অজানা কারনে তা গ্রহন করা হয় নি। উল্লেখ্য, রাশিয়া OIC এর পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র। রাশিয়ার অধিনস্ত স্বশাসিত প্রজাতন্ত্রের মুসলমানদের নিয়ে কয়েকটা পোস্ট লিখার আশা করি।

তবে আপাতত বলা যায় যে, রাশিয়ার অধিনস্ত স্বশাসিত প্রজাতন্ত্র গুলা ফেডারেল সরকারকে কাঁচকলা দেখিয়ে নিজের মত কাজ করতে পারে। তাই চেচনিয়া স্বাধীন না হলেও খুব একটা ক্ষতি হয় নি। রাশিয়ায় হওয়া গত ফুটবল বিশ্বকাপে, খোদ রাশিয়ার সাথে ম‍্যাচের আগে চেচনিয়ার সরকার পুরা মিসর জাতীয় ফুটবল দলকে রাষ্ট্রীয় ভাবে আপ‍্যায়ন করে এবং মিসরিয় ফুটবলার মোহাম্মদ সালাকে কে সম্মানজনক নাগরিকত্ত দেন। (Honorary Citizen of the Chechen Republic : 2018) যার জন‍্য মস্কোর সমালোচনার মুখে পড়ে চেচনিয়ার সরকার।

২০১৯ সালে প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে যে রাশিয়ানদের ৭৬ % মুসলমানদের প্রতি অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি এবং ১৬ % প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি দেখায় ।

ছবিতে রাশিয়ার নোরিলস্ক শহরে অবস্থিত নোর্দ কামাল মসজিদ, যা বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত মসজিদ আর রুশ অঞ্চলে প্রচলন করা মুসলিম শাসকদের মুদ্রা।

লেখক, খালিদ হাসান চোপদার
ভায়না, মাগুরা

[ দুইটা আউট নোট 

১. রাশিয়া দেখেই একদল এসে চেচনিয়া চেচনিয়া করে লাফাবে। হ‍্যাঁ, ওরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলো, এবং রাশিয়া ব‍্যাপক রক্তপাত এবং পেশিশক্তি প্রদর্শন করে তা আবার দখল করে। তবে চেচনিয়ার প্রতিবেশি প্রজাতন্ত্র গুলাও মুসলিম প্রধান। আর স্বাধীন হলেও মহাভারত কিছু করতে পরতো না। প্রমান হিসাবে আপনি পাকিস্তান আর আফগানিস্তান বাদে আর যত গুলা দেশের শেষে "স্তান" আছে তাদের পরারাষ্ট্রনীতি বা রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে খোজ নিন।

০২. দয়া করে কপি করবেন না প্লিজ ]

পরের পর্বে ইউক্রেন নিয়ে লেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

তথ‍্যসূত্র 



No comments:

Post a Comment